সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি….
সকালেই শ্রীলঙ্কা দল চলে এল বিসিবি একাডেমি মাঠে। দলটাকে নিয়ে সাংবাদিকদের বিপুল আগ্রহ। অবশ্য যতটা না শ্রীলঙ্কা, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে তার চেয়ে বেশি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এবারের ত্রিদেশীয় সিরিজে সবচেয়ে আলোচিত নাম যে তাঁরই!
কয়েক মাস আগেও যিনি ছিলেন বাংলাদেশের কোচ, তিনি এখন মাশরাফি-সাকিবদের ঘোর প্রতিপক্ষ। হাথুরু-অধ্যায় পেছনে ফেলে নতুন যুগ শুরু করার আগে শ্রীলঙ্কান কোচকে ‘স্যালুট’ দিচ্ছেন মাশরাফি।
২০১৪ সালের জুনে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরপর ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজে শুরুটা ভালো হয়নি হাথুরুর। তবে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেশের মাঠে টেস্ট-ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করে শুরু, বাংলাদেশ জেতে টানা পাঁচটা ওয়ানডে সিরিজ। ২০১৫ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, ঘরের মাঠে ধারাবাহিক সাফল্য, এমনকি বিদেশে, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভালো করায় অনেকে কৃতিত্ব দেন হাথুরুকে।
অধিনায়ক মাশরাফিও শ্রীলঙ্কান এই কোচের অবদানকে বড় করেই দেখছেন, ‘খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে আমি হাথুরুসিংহকে স্যালুট জানাই। অবশ্যই তাঁর অধীনে খেলে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। কৃতিত্ব তাঁকে দিতে আমাদের বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই। এমন না যে তাঁকে কৃতিত্ব দিতে চাই না।’
তবে এখানে কথা আছে। মাশরাফি আজ সংবাদ সম্মেলনে সেটিই মনে করিয়ে দিলেন, ‘২২ গজে আমরা (খেলোয়াড়েরা) সব বাস্তবায়ন করেছি। তামিম-মুশফিকের রেকর্ড যদি দেখেন, সাকিবের ক্যারিয়ার যদি দেখেন, মোস্তাফিজ…। সব যদি আলাদা আলাদা করে দেখেন ২২ গজে কোচ খেলোয়াড়দের বিশেষ কিছু করে দেয়নি। তাদের নিজেদের করতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাপ তাদেরই নিতে হয়েছে, তারাই সেরাটা দিয়েছে। যে-ই কোচ থাকুন, তাঁকে আমরা খেলোয়াড়েরা শতভাগ সমর্থন করেছি। কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের দিতে হবে যেভাবে তারা খেলেছে। এখন যাঁরা কোচিং স্টাফ আছেন, (রিচার্ড) হ্যালসল, সুজন চাচা (খালেদ মাহমুদ) তাঁদেরও শতভাগ সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করব। হাথুরুর জন্য শুভকামনা। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের নিয়েই বেশি চিন্তা করছি।’
কথাটা ঘুরেফিরেই আসছে। হাথুরু যেহেতু কদিন আগে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন, মাশরাফি-তামিমদের ভেতর-বাহির তাঁর ভালো জানা। কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কায় হাথুরু জানিয়ে এসেছেন, এটি তাঁকে কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। হাথুরুকে হারাতে হলে বাংলাদেশ কি নতুন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে নামবে, যেটি চমকে দেবে শ্রীলঙ্কাকে কিংবা যেটি ভাবনাতেই নেই হাথুরুর?
মাশরাফি বলছেন, ‘স্মার্ট’ পরিকল্পনা তাঁরা করছেন, তবে ‘ওভার স্মার্ট’ হতে চান না, ‘আমরা যে পরিকল্পনা করছি না, সেটা নয়। ক্রিকেটে চৌকস হওয়া ভালো। কিন্তু বাড়তি চৌকস হওয়া ভালো না। আমরা অতিবুদ্ধিগিরি ফলাতে চাচ্ছি না। অবশ্যই হাথুরুসিংহে পরিকল্পনা করবেন। আমাদেরও থাকবে। নতুন কিছু করার চেষ্টা করব। ঝুঁকি থাকলেও আমরা সেরকমই কিছু করব। পূর্ণ সহযোগিতা আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের করব। তাদের পুরো স্বাধীনতা দেওয়া হবে। তারা যেটা করে আসছে, সেটাই যেন করতে পারে।’
মাশরাফি যে ঝুঁকিটার কথা বলছেন, সেটি ‘হিসেবি ঝুঁকি’ হবে? ওয়ানডে অধিনায়ক হ্যাঁ-সূচক মন্তব্যই করলেন। এ-ও জানিয়ে রাখলেন, সফল হলে সবাই বলে হিসেবি ঝুঁকি। আবার ব্যর্থ হলেও কথা উঠবে, এত বড় ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হয়নি। মাশরাফি আপাতত হিসেবে ঝুঁকিই বলছেন। হাথুরু বাংলাদেশের কোচ থাকতে অনেক ফাটকা খেলেছেন। এবার মাশরাফিরাই না হয় তাঁর বিপক্ষে ফাটকা খেলুন!