fbpx

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কখনও হারেনি ফ্রান্সের বিপক্ষে

আজ থেকে শুরু হচ্ছে নক আউট পর্ব অর্থাৎ মূলপর্ব। যেখানে ভুল করলে আর কোনও সুযোগ পাবে না দলগুলো।

এখানে নেই কোনও সমীকরণ, নেই ভুল শোধরানোর সুযোগ। পা ফসকালেই বিদায়। আর এমন পর্বের প্রথম ম্যাচটিই খেলবে এবারের বিশ্বকাপে ভাগ্যের জোরে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখা দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও টানা দুই ম্যাচে জয়, এক ম্যাচে ড্র করা ৯৮’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

ফ্রান্স অনায়াসে দ্বিতীয় পর্বে পা রাখলেও আর্জেন্টিনাকে খাদের কিনারা থেকে উঠে আসতে হয়েছে। ফ্রান্স তাদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে, দ্বিতীয় ম্যাচে তারা পেরুকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে আর শেষ ম্যাচে তারা ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে, দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় আর শেষ ম্যাচে রোহোর রোমাঞ্চকর গোলে ২-১ ব্যবধানে নাইজেরিয়ার সঙ্গে জয়লাভ করে। আজ নক আউট পর্বে ফ্রান্সের বিপক্ষে নামবে আর্জেন্টিনা। আগের ম্যাচে জয় পাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে অনুশীলন করতে দেখা যায় শুক্রবার।

কিন্তু শঙ্কার বিষয় হচ্ছে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ। যাদের ভুলের কারণে বারবার গোল খেতে হচ্ছে তাদের। শুধু গোল নয় বারবার রক্ষণভাগ ভেঙে বল নিয়ে ঢুকে পড়ছে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা। প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর মেসি নিজেকে খুঁজে না পেলেও শেষ ম্যাচে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন সেরা ছন্দে। পুরো মাঠ জুড়ে দেখা গেছে খেলতে। তাই আর্জেন্টিনা আশা বাঁধতেই পারে কোয়ার্টারে যাবার ব্যাপারে। মেসি তার ফর্ম ফিরে পেলেও এখনও ফর্মে দেখা যায়নি হিগুয়েইন, অ্যাগুয়েরো, ডি মারিয়াদের।

এক মেসির ওপর ভর করে কতটুকু যেতে পারে আলবেসিলেস্তেরা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এটাও উল্লেখ্য যে, গত বিশ্বকাপে কিন্তু এই মেসির ম্যাজিকেই ফাইনালে উঠেছিল আলবেসিলেস্তেরা। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে পড়ে মারিও গোটসের শেষ মুহূর্তের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। পক্ষান্তরে ৯৮’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স তাদের সেরা ফর্মেই রয়েছে। যে দলে আক্রমণভাগে রয়েছেন গ্রিজম্যান, ডেম্বেলে, এমবাপে, পলপগবার মতো খেলোয়াড়রা। ডিফেন্সে রয়েছে বার্সেলোনায় মেসিরই সতীর্থ উমতিতি। যার উপর দায়িত্ব পড়েছে মেসিকে দেখে রাখার।

যদিও ইতোমধ্যেই উমতিতি বলেছেন, বার্সেলোনার মেসি আর আর্জেন্টিনার মেসি কিন্তু এক নয়। মেসির সামর্থ্য নিয়ে সতর্ক ফরাসি গোলরক্ষক স্তিভ মাঁদাঁদা। তাই তিনি ম্যাচের আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আর্জেন্টাইনদের সামলানোর অস্ত্র তাদের আছে বলে। তারপরও মেসিকে নিয়ে সচেতন ফরাসি এ গোলরক্ষক। মেসির সামর্থ্য নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রক্ষণসাইড ভালোভাবে সামলাতে হবে। তবে মেসি এরপরও সবকিছু করতে পারে।

এদিকে ৯৮’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জয়ী ফ্রান্স দলের সদস্য লিজারজু মনে করেন ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটি একা হাতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন মেসি। তিনি বলেন, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা যেমনই খেলুক না কেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে তারা ঠিকই জ্বলে উঠবে বলে মনে করেন ফ্রান্সের সাবেক তারকা।  লিজারজু বলেন, বড় ম্যাচগুলোয় নামী তারকারাই পার্থক্য গড়ে দেয়। তাই মেসির জন্য অবশ্যই বিশেষ পরিকল্পনা ভাবতে হবে। তবে আমি মনে করি এটি যাতে কোনও একজন খেলোয়াড়ের কাঁধে না দেয়া হয়।

পুরো দল মিলেই মেসি ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ডিফেন্ড করতে হবে।এতো গেলো পক্ষে-বিপক্ষের মতামত। কিন্তু দু’দলের মুখোমুখি রেকর্ড কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দু’বারের মুখোমুখিতে একবারও আলবেসিলেস্তেদের হারাতে পারেনি ফরাসিরা। ১৯৩০ সালে ১৫ জুলাই প্রথম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে। দ্বিতীয়বার তাদের দেখা হয় ৪৮ বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে ৬ জুন। সে দেখাতেও আর্জেন্টিনা ২-১ গোলের ব্যবধানে তাদের পরাজিত করে।

অন্যদিকে বৈশ্বিক ফুটবলেও কিন্তু ফরাসিদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আলবেসিলেস্তেরা। এ পর্যন্ত উভয় দল ১১বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার জয় ৬ ম্যাচে হলেও ফ্রান্সের জয় মাত্র ২ ম্যাচে। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র হয়েছে। অবশেষে বলা যায়, সবসময় যে রেকর্ড প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রাখবে এমনও নয়। কারণ এটি বিশ্বকাপ। মর্যাদাকর একটি টুর্নামেন্টের খেলা।

সকলেই চাইবে ১৫ জুলাই মস্কোর লুঝনিকিতে সোনালি ট্রফি দু’হাতে উঁচিয়ে ধরতে। এখন দেখার বিষয় আজ ম্যাচ শেষে কে এগিয়ে যায় সে পথে? শেষ হাসি কে হাসবে, মেসি নাকি গ্রিজম্যান?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *