fbpx

মাগুরায় বাস থামিয়ে গৃহবধূকে অপহরণ

মাগুরায় স্বামীর নির্যাতনের শিকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আশ্রিত এক গৃহবধূ অপহৃত হয়েছেন

মাগুরায় স্বামীর নির্যাতনের শিকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আশ্রিত এক গৃহবধূ অপহৃত হয়েছেন। মাগুরা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বুধবার বিকেলে বাস থামিয়ে তাঁকে অপহরণ করা হয়।

অপহৃত গৃহবধূর নাম ফারজানা আক্তার রনি (২৬)। অপহরণকারীরা ওই গৃহবধূর সঙ্গে থাকা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মী শামসুন্নাহারকে মারধর করে আহত করেছেন। তাঁকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শামসুন্নাহার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত স্বামীসহ সাত থেকে আটজন ব্যক্তি অপহরণে অংশ নেয়। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ফারজানাকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১১টা) ওই গৃহবধূ বা তাঁর স্বামীর কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, মাগুরা সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের মোহর আলী মেয়ে ফারজানা আক্তার রনির (২৬) সঙ্গে ২০১১ সালে মাগুরা পৌরসভার পূর্বপাড়ার রফিকুল ইসলামের (৫২) বিয়ে হয়। রফিকুল ইসলাম একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। রনিকেসহ তিনি মোট সাতটি বিয়ে করেন। চার বউ তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে রনিসহ তাঁর তিনটি বউ রয়েছে।

নীনা গোস্বামী বলেন, রফিকুল ইসলাম বিত্তবান ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। বাবা-মা রনির অমতে রফিকুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেয়। বয়সে দ্বিগুণ বড় স্বামীর সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। স্বামী তাঁকে অকথ্য নির্যাতন করতেন। অব্যাহত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০১৬ সালে রনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে স্বামীকে তালাক দেয়। কিন্তু রনির বাবা-মা জোর করে আবারও তাঁকে স্বামীর ঘরে পাঠায়। এরপর রফিকুল নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। তাঁকে অনেকটা গৃহবন্দী করে রাখে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রনি আবারও স্বামীর বাড়ি থেকে পালান। তিনি ঢাকায় গিয়ে এক মহিলা হোস্টেলে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি আইন ও সালিশ কেন্দ্রে আশ্রয়ের জন্য আসেন।

নীনা গোস্বামী  ‍সাংবাদিকদের বলেন গত ৪ মার্চ ফারজানা আক্তার রনি আমাদের কাছে এসে তাঁর সমস্যা জানিয়ে আশ্রয় চান। পরে আমরা নিয়মানুযায়ী মোহাম্মদপুর থানাকে অবহিত করে তাঁকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করি। রনি আমাদের জানিয়েছিলেন, তিনি পালিয়ে আসায় রফিকুল তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরি মামলা করেছেন। এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার খবর স্বামী রফিকুল ইসলামের কাছে পৌঁছে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফারজানার স্বামীর দায়ের করা ওই মামলায় ফারজানাকে আটক করতে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালায়। গত ৬ মার্চ সকালে মাগুরা সদর থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঢাকায় আসে। তাঁরা মোহাম্মদপুর থানার পুলিশের সহযোগিতায় নেয়। আমাদের সঙ্গে কথা বলে। যেহেতু মামলার বিষয় তাই আমরা তাঁকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মীকে সঙ্গে দিয়ে পুলিশ হেফাজতে মাগুরায় পাঠিয়ে দিই।

নীনা গোস্বামী বলেন, বুধবার সকালে পুলিশি হেফাজতে রনিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিয়োজিত আইনজীবী তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করেন। আদালত রনিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মীর জিম্মায় জামিন দেন। পরে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করে পুলিশ পাহারায় তাঁকে ঢাকায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম সন্ধ্যায়  বলেন আমরা পুলিশ প্রোটেকশনে তাঁকে ঢাকা পাঠাচ্ছিলাম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মী শামসুন্নাহার আমাদের বলেন; ঢাকার একটি বাসে তাঁদের দুজনকে তুলে দিলে তাঁরা ঢাকায় চলে যেতে পারবেন। বিকেল পুলিশ তাঁদের দুজনকে বাসে তুলে দিয়ে প্রায় দশ মিনিট পর বাসস্ট্যান্ড থেকে আসে। পরে জানতে পারি, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাগুরার রামনগর পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে একটি মাইক্রোবাসে সাত-আটজন সঙ্গী নিয়ে ফারজানার স্বামী ওই বাসটি থামায়। তাঁরা বাস থেকে ফারজানাকে অপহরণ করে। এ সময় বাধা দিলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মী শামসুন্নাহারকে মারধর করে। শামসুন্নাহারকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার ফারজানাকে উদ্ধারও রফিকুলকে গ্রেপ্তারের অভিযানে নেমেছে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনাটি কল্পনার বাইরে। কেউ চিন্তাই করতে পারেনি যে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে এভাবে ওই গৃহবধূকে অপহরণ করা হবে। আমরা তাঁকে উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। আহত আইন ও সালিস কেন্দ্রের কর্মীকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আহত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মী শামসুন্নাহার বলেন অস্ত্র হাতে ফারজানার স্বামী বাস থামিয়ে তাঁকে নিয়ে যায়। আমি বাধা দিলে তাঁরা আমাকে মারধর করে। ফারজানার স্বামীর সঙ্গে মাইক্রোবাসে আরও সাত থেকে আটজন এসেছিলেন। তাঁরা আমার ব্যাগ, টাকা-পয়সা, ‍মোবাইলফোন সবই লুট করে নিয়ে গেছে।

আইন ও সালিস কেন্দ্রের উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা প্রথম। আমরা হতভম্ব।’

https://currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *