fbpx

করোনা আতঙ্কে আশার আলো: ওষুধ আছে, আসছে ভ্যাকসিন

ছোঁয়াচে করোনার ছোবলে পড়লেই জীবন শেষ। করোনার কোনো ওষুধ নেই। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে এ আতঙ্কের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে কয়েকটি দেশ।

বাজারে থাকা ওষুধেই কার্যকর ফল পেয়েছে জাপান, চীন ও কিউবার চিকিৎসকরা। দেশগুলো একেবারে হাতে-কলমে প্রমাণ করেছে যে, কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় বেশকিছু কার্যকর ওষুধ রয়েছে। এসব ওষুধ প্রয়োগে সফল চিকিৎসাও করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সুস্থ হয়ে ঘরেও ফিরেছেন অসংখ্য রোগী। সুতরাং প্রতিষেধক না থাকলেও বাজারে প্রচলিত ওষুধেই যে এর নিরাময় সম্ভব তা নিঃসন্দেহ।

করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে সফল দেশ চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন ইতিমধ্যেই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ৩০টি ওষুধের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে কিউবার ইনফেরন আলফা টু-বি (Interferon alpha 2-b) নামের একটি ইনজেকশন।

কিউবার প্রায় পনেরোশ’ রোগী সুস্থ হয়েছে এই ইনজেকশনে। এরপরই রয়েছে জাপানের ফেভিপিরাভির (favipiravir) নামের ইনফ্লুয়েঞ্জার ট্যাবলেট। মাত্র চার দিন সেবনেই দূর হয় করোনা।

করোনার আঁতুড়ঘর চীনের উহান তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। তারপরও থেমে নেই বিশ্ব। একটি কার্যকরী প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) তৈরিতে দিনরাত এক করে ফেলছেন বিশ্ব রোগতত্ত্ব গবেষকরা।

আগামী সপ্তাহেই এসএনজি০০১ (SNG001) নামে ইনহেলার জাতীয় একটি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। প্রতিষেধক ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ও শুরু হয়ে গেছে। গত সপ্তাহেই মানবদেহে এ প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে একই পরীক্ষা চালাবে চীনও। বৃহস্পতিবার তার অনুমোদনও দিয়েছে।

চীন অবশ্য আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, এপ্রিলেই ভ্যাকসিনের বাজারজাত করবে বেইজিং।

দেশে দেশে ‘অবরোধ কৌশল’র মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার গতি অনেকটা রোধ করা গেছে। তা সত্ত্বেও ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) চোখে এটা এখন ‘বিশ্ব মহামারী’। দুই লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু চিকিৎসায় হাজার হাজার মানুষ সুস্থও হয়ে উঠছে। এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও করোনার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় সাফল্য দেখিয়েছেন চীন, জাপান, কিউবা ও ব্রিটেনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকেও প্রায় ২২টি ওষুধ তৈরি করেছে কিউবা। এর মধ্যে ইনটারফেরন আলফা টু-বি ওষুধটি করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ক্ষমতাসম্পন্ন প্রমাণিত হয়েছে। ওষুধটি নেবুলাইজেশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে এটা বেশি কার্যকর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কিউবার ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়োকিউবাফার্মা জানিয়েছে, ওষুধটি প্রয়োগ করে এক হাজার পাঁচশ’রও বেশি রোগী সুস্থ করে তুলেছে তারা। করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ৩০টি ওষুধের একটি তালিকা করেছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। কিউবার তৈরি তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে। মার্টিনেজ জানিয়েছেন, ওষুধটির ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়েছে। নিজ দেশের জনগণের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি আক্রান্ত অন্যান্য দেশকেও এটা সরবরাহ করবে কিউবা সরকার।

জাপানের ওষুধটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ওষুধটি করোনাভাইরাস রোগীদের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনা সরকার।

ওষুধটি উৎপাদন করেছে জাপানের ফুজিফ্লিম কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান টয়ামা কেমিক্যাল। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ঝাং শিনমিন বলেন, তাদের এই ওষুধটি উহান ও শেনজেন শহরে করোনায় সংক্রমিত ৩৪০ রোগীর ওপর প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। শেনজেনে যেসব রোগীকে এ ওষুধ দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই চার দিনের মধ্যেই সেরে উঠেছেন। আর যাদের এ ওষুধ দেয়া হয়নি, তারা সুস্থ হতে সময় নিয়েছেন ১১ দিন।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৫টি কোম্পানি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের ওপর প্রয়োগ শুরু করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক প্রয়োগের খুব কাছাকাছি চলে আসার কথা জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, বড়জোর ছয় মাসের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন হাতের নাগালে চলে আসবে বলে আশা করছেন তারা। চীনের একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষকরা এই সপ্তাহে একটি ভ্যাকসিনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর অনুমোদন পেয়েছেন।

চীনা সরকার নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে এ ভ্যাকসিন মানুষের জন্য নিরাপদ কিনা, তা প্রথম ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরীক্ষার জন্য ১০৮ জন সুস্থ ব্যক্তিকে কাজে লাগাবে দেশটি। ১৬ মার্চ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ পরীক্ষা চালানো হতে পারে।

সূত্র : ব্লুমবার্গ, গ্লোবাল রিসার্চ, পিপলস ওয়ার্ল্ড, পিপলস ডেইলি, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-গার্ডিয়ান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়ো-টেকনোলজি নিউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *