সারা বিশ্বে চীন মাস্ক ও ভেন্টিলেটরের একচেটিয়া ব্যবসা করছে
করোনা মহামারীর কারণে সারা বিশ্বেই হুহু করে বাড়ছে জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল সরঞ্জামের চাহিদা।
এটাকেই ব্যবসার নতুন সুযোগ হিসেবে লুফে নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক ও সরবরাহকারী দেশ চীন। দেশে দেশে লকডাউনের সুযোগে একচেটিয়া ব্যবসা করছে দেশটির কোম্পানিগুলো।
নতুন নতুন কোম্পানি গড়ে উঠছে। সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা চলছে ফ্যাক্টরি। টাকা ছাপার মেশিনের মতো অবিরাম তৈরি হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক।
উৎপাদন হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), করোনা টেস্টিং কিট ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার মেশিন ভেন্টিলেটর।
শত শত বিমান ও জাহাজে এসব সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে দেশটির হাজার হাজার কোম্পানি। রফতানি হচ্ছে ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, মঙ্গোলিয়া, ইউক্রেনের মতো বিশ্বের শতাধিক দেশে। খবর পিপলস ডেইলি ও গ্লোবাল টাইমস। এই মুহূর্তে পোয়াবারো চীনের মাস্ক ব্যবসায়ীদের।
মহামারীর প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে লাভজনক হিসেবে হাজির হয়েছে সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবসা। আকাশছোঁয়া চাহিদা পূরণে নতুন করে হাজার হাজার কোম্পানি গড়ে উঠেছে। পুরোদমে উৎপাদন চলছে এসব কোম্পানিতে।
দেশটির ব্যবসায় তথ্য-উপাত্তবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তিয়ানইয়ানচার মতে, গত দুই মাসেই ৮ হাজার ৯৫০টি নতুন কোম্পানি মাস্ক উৎপাদন শুরু করেছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল তথা ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গুয়ান সুনজে। উহানে করোনা ছড়িয়ে পড়ার এক মাসের মাথায় নতুন একটি মাস্ক ফ্যাক্টরি চালু করেন তিনি। উৎপাদন শুরু হতে সময় লাগে মাত্র ১১ দিন।
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই ফ্যাক্টরির পাঁচ প্রোডাকশন লাইনে তৈরি হচ্ছে এন৯৫ মাস্ক। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার পিস। গুয়ান সুনজের ফ্যাক্টরিতে তৈরি এসব মাস্ক যাচ্ছে ব্যাপক করোনাপীড়িত ইতালিতে। ফ্যাক্টরি বিক্রয় ব্যবস্থাপক শি সিনহুই বলেন, মাস্ক মেশিন হচ্ছে টাকা ছাপানোর মেশিনের মতো।
করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে দরকারি কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র ভেন্টিলেটর। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে ভেন্টিলেটরের ভয়াবহ সংকটে বহু দেশ। চাহিদা আকাশচুম্বী। স্রোতের মতো নতুন নতুন ক্রয়াদেশ আসছে চীনের কোম্পানিগুলোয়। সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হচ্ছে ভেন্টিলেটর কারখানা।
এই মুহূর্তে ভেন্টিলেটর উৎপাদনে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বেইজিংয়ের ‘অয়নমেড কোং’। দিন-রাত এক করে কাজ করছেন কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা।
কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা লি কাই গ্লোবাল টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিদেশ থেকে অনেক বেশি ক্রয়াদেশ আসছে। গত দুই মাসে তার কোম্পানি ব্রিটেন, ইতালি, মঙ্গোলিয়া ও ইউক্রেনের মতো বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে অসংখ্য ক্রয়াদেশ পেয়েছে বলে জানান লি। নতুন করে ফ্যাক্টরি চালু করেছে বহু কোম্পানি।
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন নতুন কোম্পানিও। বিজনেস ডেটা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার নতুন ভেন্টিলেটর কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
এর ফলে মোট কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪২০টিই চীনের সরকারি লাইসেন্টপ্রাপ্ত। এসব কোম্পানির প্রত্যেকটাতেই সপ্তাহে ৮০-১০০টি ভেন্টিলেটর তৈরি হচ্ছে। উৎপাদিত সব ভেন্টিলেটরই বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।
ভেন্টিলেটর ছাড়াও এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ব্যাপক ঘাটতি করোনা টেস্টিং কিট, পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), গ্লাভস, গাউন, ইনফ্রেয়ার্ড থার্মোমিটার ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে হুশিয়ারি ও সতর্কতা জারি করেছে। সংকট মোকাবেলায় বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে পিপিইসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে চীন সরকার ও দেশটির বেশ কয়েকটি সংগঠন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পিপিইর ক্রয়াদেশও পেয়েছে দেশটির কোম্পানিগুলো।