fbpx

হামিদুল হক আর নেই।

চলে গেলেন বীর প্রতীক হামিদুল হক

বীর প্রতীক হামিদুল হক (৭৪) আর নেই
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া রণাঙ্গণের বীরযোদ্ধা টাঙ্গাইলের সখীপুরের কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বীর প্রতীক হামিদুল হক (৭৪) আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০মিনিটে রাজধানীর ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে দিনকাট ছিল এ বীরযোদ্ধার।
গত ২৫ মার্চ অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বীর প্রতীক হামিদুল হক’ শীর্ষক সচিত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ( সিইও) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজের নজরে আসলে বীর প্রতীকের চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন তিনি। গত ২৭ মার্চ ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গত ২৮ মার্চ হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ে নানা ধরণের রোগ। তার শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা, প্রটেস্ট বড় হওয়া, পটাসিয়ামের পরিমান কম থাকা, লাঞ্চে পানি জমে ঠান্ডা লাগা, শ্বাস কষ্টজনিত রোগ ও ফুসফুসে ইনফেকশনের সমস্যা ছিল।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিনের নজরে আসলে তিনিও বীর প্রতীক হামিদুল হকের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্বভার নেয়ার কথা জানিয়ে ছিলেন। সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী সরকার রাখীও সার্বক্ষণিক বীর প্রতীক হামিদুল হকের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
গত ১ এপ্রিল হামিদুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে (ইন্টেনসেভ কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। তাকে কৃত্রিম শ্বাসনালী দেয়া হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন হামিদুল হক বীর প্রতীক। উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুস সামাদের হলে উঠলেন তিনি। আবদুস সামাদ তার বাল্যবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য ৭ মার্চ ভোর বেলা চলে গেলেন রেসকোর্স ময়দানে। খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হলেন। হামিদুল হক ১৯৭১ সালে স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেন তিনি। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর সহকারি বেসামরিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য হামিদুল হককে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২। হামিদুল হক ১৯৭২ ও ৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।
দীর্ঘ কর্মময় জীবনে মানুষটি শিক্ষকতা করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। অর্থ-সম্পদের পেছনে ছোটেননি কখনো। চাননি তেমন কিছুই। সবার কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান-শ্রদ্ধা। তাতেই তুষ্ট ছিলেন। ১৯৯০ সালে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তাঁর বাবার নাম হাবিল উদ্দিন, মা কছিরন নেসা, স্ত্রী রোমেচা বেগম। তাঁদের চার মেয়ে, এক ছেলে।
এদিকে, বীর প্রতীক হামিদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা, সখীপুর প্রেসক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
https://currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *