চন্দিকা হাথুরুকে টাইগারদের গুরুদক্ষিণা
চন্দিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর তার দলের বিপক্ষে প্রথম লড়াই। ম্যাচের আগের আবহে বেজেছে সেই লড়াইয়ের দামামা। দলের জন্য তা বাড়তি চাপ না হয়ে পারেই না। কিন্তু ক্রিকেটাররা যেন সেটিকেই করে নিলেন অনুপ্রেরণা। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশ গুঁড়িয়ে দিল শ্রীলঙ্কাকে।
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার ছুটির দিনে গ্যালারি ভরা দর্শক ভেসেছে রেকর্ড ব্যবধানে জয়ের উচ্ছ্বাসে।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। আগের রেকর্ড ছিল ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬০ রানের জয়।
প্রথম দুই ম্যাচেই বোনাস পয়েন্টসহ জয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে ফেলল টুর্নামেন্টের ফাইনালও।
লঙ্কান বোলিংকে পাত্তা না দিয়ে বাংলাদেশ তুলেছিল ৭ উইকেটে ৩২০ রান। রান তাড়ায় উড়ে গেছে লঙ্কান ব্যাটিংও। চোট পাওয়া অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ছাড়া খেলতে নামা দল ৩২.২ ওভারেই গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানে।
প্রতিপক্ষ শিবিরে হাথুরুসিংহে থাকায় চেপে বসা চাপকে জয় করার অভিযানে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছেন দলের অভিজ্ঞ সেনানীরাই। তামিম ইকবালের ব্যাট আরও একবার ভরসার বার্তা পাঠিয়েছে ড্রেসিং রুমে। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটও কথা বলেছে পরিস্থিতি অনুযায়ী।
বল হাতে নতুন বলে মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন অসাধারণ। যথারীতি এখানেও উজ্জ্বল সাকিব।
টস জয়ী বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেন তামিম ও এনামুল হক। যদিও দুই প্রান্তের ব্যাটিং ছিল দুই রকম।
তামিমের ব্যাটে ছিল বরাবরের নির্ভরতা। তবে এনামুল ছিলেন ছটফটে। প্রথম ওভারেই বেঁচে যান স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে। তাতে থেমে থাকেনি তার শট খেলার চেষ্টা।
শ্রীলঙ্কানরাও ছিলেন উদার। যেন পণ করেছিলেন এনামুলকে আউটই করবেন না! রান আউট ও স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হলো, অল্পের জন্য ক্যাচ জমল না হাতে।
শেষ পর্যন্ত এনামুল ফিরেছেন থিসারা পেরেরার বাউন্সারে কিপার নিরোশান ডিকভেলার দারুণ ক্যাচে। ৩৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটির পথেই অবশ্য এনামুল পৌঁছেছেন একটি মাইলফলকে। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডে ছুঁয়েছেন শাহরিয়ার নাফিসকে (২৯ ইনিংস)
জুটি ভাঙলেও ততক্ষণে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে শক্ত ভিত। ১৫ ওভারে রান ৭১। প্রয়োজন ছিল তখন রানের গতিতে একটু দম দেওয়া। সাকিবের ব্যাট জানে পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। তাই জুটি যেমন গড়ে উঠল, বাড়ল রানের প্রবাহও।
তিনে উঠে আসার পর সাকিবের ব্যাটে দায়িত্বশীলতার যে নতুন ছায়া, সেটির ছোঁয়ায় আবারও সমৃদ্ধ দলের ইনিংস। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংসের মেরুদণ্ড সাকিব-তামিম জুটি।
শুরু থেকে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করেছেন সাকিব। তামিম পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৭২ বলে। তবে তার পর বাড়ান গতি। আসেলা গুনারত্নের টানা দুই বলে বেরিয়ে এসে মারেন ছক্কা।
দুজনের জুটির সময় লঙ্কান বোলারদের মনে হচ্ছিলো অসহায়। তবে হুট করেই দারুণ এক ডেলিভারি করে তামিমকে ফিরিয়ে দেন আকিলা দনঞ্জয়া।
জুটি বা তামিম, সেঞ্চুরি হয়নি কারও। জুটি থেমেছে ৯৯ রানে। আগের ম্যাচে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকা তামিম এবার আউট ৮৪ রানেই।
দারুণ দুটি জুটি গড়ে উঠেছে এরপরও। তৃতীয় উইকেটে সাকিব ও মুশফিক তুলেছেন ৫৭। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ৫০।
তিনে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ জয়ের পথে আরেক ধাপ এগিয়েছেন সাকিব। ৬৩ বলে ৬৭ করে ফিরেছেন গুনারত্নের দারুণ ফিরতি ক্যাচে।
মুশফিকের ব্যাট ছিল আরও উত্তাল। দারুণ সব শটের প্রদর্শনী সাজিয়ে ৫২ বলে করেছেন ৬২।
মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক পরপর দুই ওভারে আউট হওয়ায় শেষ দিকে রানের গতি কমে গিয়েছিল একটু। শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে ৩২০ রানের ঠিকানায় নিয়ে গেছেন সাব্বির। শেষ দুই বলে ছক্কা-চারসহ ১২ বলে সাব্বির করেছেন ২৪।
বড় রান তাড়ায় ঝড়ো শুরুর জন্য শ্রীলঙ্কা তাকিয়ে ছিল কুসল পেরেরার দিকে। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশ অধিনায়কের পরিকল্পনাও ছিল জুতসই। নাসির হোসেনের অফ স্পিনে শুরু। তার বলেই বোল্ড বিপজ্জনক পেরেরা।
আরেকপাশে দুর্দান্ত প্রথম ওভারে সুর বেধে দেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা করেছে হাঁসফাঁস।
টানা ৮ ওভারের অসাধারণ স্পেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাভিশ্বাস তোলেন লঙ্কানদের। তুলে নেন উপুল থারাঙ্গা ও কুসল মেন্ডিসের উইকেট।
সেই চাপ থেকে আর বের হতে পারেনি লঙ্কানরা। ম্যাথিউসের জায়গায় একাদশে ফেরা নিরোশান ডিকভেলার স্টাম্প উপড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই ম্যাচের অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল ফিরেছেন রান আউটে।
সাকিবের এক ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কা মেরেছিলেন থিসারা পেরেরা। সাকিব প্রতিশোধ নিয়েছেন ওই ওভারেই উইকেট নিয়ে।
অসাধারণ দলীয় পারফরম্যান্সের দিনেও ঠিকই আলাদা করে ফুটে উঠেছে সাকিব আল হাসানের দ্যুতি। ৬৭ রান আর ৩ উইকেট, নিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিযানে ম্যাচ সেরা টানা দ্বিতীয় ম্যাচ!